ঢাকা, সোমবার   ০৫ মে ২০২৫

সেশনজটের ভারে ন্যুব্জ হাবিপ্রবি 

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:৫৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছরের সেশনজট নিয়ে পড়ালেখা করছেন। 

করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার কথা বললেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৮ সালে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা ৫ বছরের মাথায় এখনও চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ব্যাচগুলোর অবস্থাও প্রায় একই। 

সেশনজটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ এবং ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি নানান খাতে নিজেকে অছাত্র হিসেবে দেখাতে হচ্ছে। বৈধ শিক্ষার্থী হয়েও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

এবিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজিন ইসলাম বলেন, পাসপোর্ট করতে গিয়ে নিজেকে ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে পারিনি। কারণ আমার আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ। নিজেকে বেকার হিসাবে উপস্থাপন করতে হয়েছে। অথচ পড়াশোনার আরও দেড় বছর বাকি। ২ মাস আগে আইডি কার্ড রিনিউ করতে দেই, কিন্তু আগের মেয়াদের কার্ডই প্রদান করা হয়েছে। 

সেশনজটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হতাশায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ মধ্যবিত্ত ও গরিব হওয়ার কারণে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হচ্ছেন। 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পারিবারিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়ালেখা শেষ করে দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকতে চায় কিন্তু যথাসময়ে অনার্স শেষ না হওয়ায় চোখের সামনে দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চলে গেলেও শুধু চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা তাদের।

ভৌগোলিক অবস্থান ও সংস্কৃতিগত মিল থাকায় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ যেমন নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটান সহ বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পড়তে আসেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। তাদের কণ্ঠেও অসন্তোষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিতে এসে এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পাসপোর্ট, ভিসা এবং ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান তারা।

অধিক সময় ধরে একই সেমিস্টারে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এমতাবস্থায় দ্রুত সেমিস্টার শেষ করতে অনুরোধ তাদের।

এ ব্যাপারে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাফিয়া আখতার বলেন, সেশনজটের প্রধান কারণ বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা। যদিও আমাদের অনুষদে এবছর আটজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও আরও শিক্ষক প্রয়োজন। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক স্বল্পতা ছাড়াও পরীক্ষার রেজাল্ট প্রক্রিয়াকরণে দেড়ি হয়ে যাবার কারণেও অনেক সময় সেশনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কোর্সে এক্সটার্নাল শিক্ষকরা পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। অনেক সময় তারাও ফলাফল দিতে দেড়ি করেন। এজন্যও কিছুটা সেশনজটে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফলাফল প্রক্রিয়াকরণে কোন দেড়ি হয় না। বরং শিক্ষকরাই খাতা দেখতে দেড়ি করেন। এক্সাম কন্ট্রোলারে খাতা জমা হবার পর অনেক শিক্ষক দু’তিন মাসেও খাতা নিয়ে যান না। আবার খাতা নেবার পর অনেকে দেড়িতে জমা দেন।

দ্রুত ফালাফল তৈরিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতদূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবেক উপাচার্য মহোদয় অটোমেশন প্রক্রিয়ার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন সেটি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল সম্প্রতি অটোমেশন প্রক্রিয়ার ব্যাপারটি দেখছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান বলেন, এবিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সেশনজট কাটানোর জন্য বর্তমান প্রশাসন সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি